রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০২২

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ২ মেডিকেলে শিক্ষার্থী ভর্তি

 নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ২ মেডিকেলে শিক্ষার্থী ভর্তি


মেডিকেল

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও চলতি শিক্ষাবর্ষে ঢাকার আইচি ও রাজশাহীর শাহ মখদুম নামে দুটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে। অথচ মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় কয়েক বছর আগে কলেজগুলোতে ভর্তি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এছাড়া আরও কয়েকটি মেডিকেল অবৈধভাবে ভর্তির চেষ্টা চালালে শেষ পর্যন্ত তা থেমে যায়। এমন প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র যুগান্তরকে জানিয়েছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পরিচালনা নীতিমালা অনুযায়ী শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৭ সালে গাজীপুরের নাইটিঙ্গেল, ২০২০ সালে রাজশাহীর শাহ মখদুম ও রংপুরের নর্দান মেডিকেল কলেজের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। শিক্ষার্থীদের অন্য কলেজে মাইগ্রেশন করে দেওয়া হয়। এছাড়া ২০১৭-১৮ সেশন থেকে ধানমন্ডির নর্দান ইন্টারন্যাশনাল, শেরেবাংলা নগরের কেয়ার মেডিকেল ও ডেমরার আমুলিয়ার আইচি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে স্থগিত আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু চলতি শিক্ষাবর্ষে কারও তোয়াক্কা না করে আইচি ও শাহ মাখদুম মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে বলেছে, আইচিতে ৫০ আসনের সবকটিতে ভর্তি নিয়েছে। অথচ সেখানে দুটি বিভাগে শিক্ষক না থাকাসহ সাতটি বিভাগে অধ্যাপকের পদ শূন্য রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালে ৭০ শতাংশ রোগী ভর্তি থাকার কথা থাকলেও ২৮ জুলাই সেখানে মাত্র ১৫ জন রোগী ভর্তি ছিল। সবচেয়ে নাজুক অবস্থা দেখা গেছে নাইটিঙ্গেল মেডিকেল কলেজে। চরম শিক্ষক সংকট ছাড়াও হাসপাতালে রোগী নেই বললেই চলে। ফলে বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ৫৬ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে অন্যত্র মাইগ্রেশনের জন্য আবেদন করে। এরপরও ২৮ জুলাই পর্যন্ত ২৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া এবারের মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থী ১০০ নম্বরের মধ্যে মাত্র ১১ এবং আরেক শিক্ষার্থী ১৮ নম্বর পেলেও শাহবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দেয়। এছাড়া একজনের ভর্তি পরীক্ষায় সিরিয়াল আসে ৫৬ হাজার, কিন্তু বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে ২৮০০ মেধাক্রম দেখিয়ে তাকে ভর্তির সুযোগ দেয়। এমনকি পরীক্ষা না দিয়েই এক শিক্ষার্থী ইউনিভার্সেল মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পান। এমন তথ্য ফাঁস হওয়ার পর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত শুরু হলে বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে মর্মে কলেজগুলো ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। সাভারের গণস্বাস্থ্য মেডিকেলে ৬০ আসনের বিপরীতে ১১০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।

জানতে চাইলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুবিন খান যুগান্তরকে বলেন, অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে কোনো কলেজ বন্ধ বা চালুর ক্ষমতা নেই। ফলে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর সব বলতে পারবে। কলেজগুলোর শিক্ষা ও সেবার গুণগত মান কিভাবে বাড়ানো যায়, সে লক্ষ্যে সংলাপের মাধ্যমে একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ভর্তিতে অসাধু উপায়ের বিষয়টি জানার পর মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে তদন্তের জন্য বলেছি। এজন্য একটি কমিটিও করা হয়েছে। কমিটির তদন্তে টেম্পারিংয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এটা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। তবে অ্যাসোসিয়েশন খারাপ কোনো কিছুতেই উৎসাহ দেয় না।’

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এনায়েত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘কেউ অসদুপায়ে ভর্তির চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের পরিষ্কার কথা যেসব মেডিকেলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তারা নিয়মবহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করলেও শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন পাবে না। যত চেষ্টা-তদবিরই করুক কাজ হবে না। আর মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য সেন্ট্রাল স্টুডেন্ট পোর্টাল সিস্টেম রেজিস্ট্রেশন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাই চাইলেও কেউ অনিয়ম করতে পারবে না।’ বিএমডিসির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার ডা. আরমান হোসেন বলেন, নির্দেশনা অমান্য করে শিক্ষার্থী ভর্তি করলে তাদের সনদ ও রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে না। ফলে ভর্তি হওয়ার আগে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যেন কলেজ সম্পর্কে ভালোমতো জেনে নেন। কলেজ পরিচালনায় সরকারের হালনাগাদ অনুমোদন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও বিএমডিসি স্বীকৃতি রয়েছে কিনা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়রে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব সাইফুল হাসান বাদল যুগান্তরকে বলেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শাহ মখদুম ও আইচি মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী ভর্তি করছে বলে শুনেছি। পরে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিতে দিয়ে অভিভাবকদের সতর্ক ও শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে নিষেধ করেছেন। আদালতের মাধ্যমে আইনগতভাবে তা মোকাবিলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করা হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রমাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে, এখন যাচাই-বাছাই চলছে। পাশাপাশি মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে অটোমেশন পদ্ধতি চালু হচ্ছে। শিক্ষক, ল্যাব ও অবকাঠামো সমস্যা নিরসনে মন্ত্রণালয় এবং দুই অধিদপ্তরের সমন্বয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই সংকট কেটে যাবে।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: